শৈতাভিশাপ

শীতের সকাল (জানুয়ারী ২০২৪)

আদনান খালিদ সাম্য
  • 0
  • ৫৬
আমার দিদি খুব ভালো নাচতে পারতো,সে দেখতে খুব সুন্দরী ছিল,নীল চোখ,বেণি করা চুল,চিকন আইব্রু, গোলাপি ঠোঁট, চ্যাপ্টা নাক,চিকন চোখ,কপালে কালো রঙের টিপ,চিকন মুখ,চওড়া কপাল,আমার দিদি এমনিতেই সুন্দরী ছিলেন,তার সৌন্দয্য বর্ধিত হত কারণ তার ঠোঁটের কোনায় কালো তিল ছিল,এই তিলটাকে তিনি সৌভাগ্য মনে করতেন, .
।এখন তার নাম ছিল দুর্গেসনন্দীনি অনন্যা,তার বন্ধুরা বা স্কুলের ছাত্ররা ডাকত অনন্যাদি, মা বাবা আত্নীয় রা ডাকত নন্দীনি,আমি ডাকতাম দুরগাদি,তিনি আমাকে বলতেন,যাদের মুখে তিল থাকে, তারা নাচতে পারে, গাইতে পারে,দিদি আক্ষেপ করে বলতেন,তোর মুখে তিল নেই,যদি থাকতও,খুবই ভালো হতো রে, অপু!!
দিদি বেশ কবার স্কুলে সেরা ডান্সারের এওয়ার্ড পেয়েছেন,তাই দিদি আমাকে খুব কষে ধরে নাচ শেখাতেন,প্রথমে যে গান টার উপর আমাকে নাচতে আদেশ দেন তা হল রবিঠাকুরের মম চিত্তে রীতি নৃত্যে কে যে নাচে,তাতা থইথই, সেই গানে নাচার দিন তিনি বলেছিলেন,শোন অপু,তালের সাথে মিল রাখিস,কিন্তু। আমার কোন সমস্যা ছিল না,তবে দিদি সেদিন আমায় ইউনিভার্সিটির সব বড় আপু আর বড় ভাইদের সামনে
নাচ করিয়েছিলেন,নাচ শেষে তার বন্ধুরা বলছিল,তোর ভাইতো বেশ naচতে পারে,না,সত্যি,তালের সাথে ভালো মিল আছে তার,তারা যখন এসব বলছিল,স্টেজের পর্দার পিছন থেকে উঁকি মেরে আমি সব শুনেছি , একদিন না দিদির নাচ দেখতে গিয়েছিলাম,এই ৪ বছর আগে,তো নাচ শেষে একটি ছেলে,ফাইভে পড়ে,দিদিকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাম দিয়ে বসেছিল দিদি তখন নাইনে পড়ে,,দিদি জিজ্ঞেস করেছিল কেন,আমার মধ্যে এমন কি আছে,ছেলেটা উত্তর দিয়েছিল,তোমার ঠোঁটের কোনায় একটা তিল আছে,, দিদি মুচকি হেসে চলে গিয়েছিল,পরদিন ছিল কনকনে ঠান্ডা, সুর্য ঠিক উঁকি দিয়েছে কিনা জানতামইনা, বোঝাও যাচ্ছিল না। তবে এটা মনে ছিল, যে আজ তো স্কুল,যেতে হবে,,মন খারাপ হয়ে গেল,লেপ ছেড়ে উঠে পড়া, শীতের সকালে ল্যাপ গায়ে দিয়ে শোয়া আমি,এখন উঠে চলে যেতে হবে তা আমার কাছে ভুতের থেকেও ভয়াবহ মনে হচ্ছিল, শীতের সকালে কার মন চায় লেপ ফেলে উঠতে বলুন,কিন্তু উঠতে হবে,কিছু করার নেই, জানালার পর্দা সরিয়ে উঁকি মারলাম,দেখলাম কম করে হলেও ফজরের আজান দিয়েছে,আলো ফুটতে শুরু করেছে,ভাবলাম আগে রেডি হয়ে দিদিকে, চমকে দেই,মনে পড়ল আজ তো স্কুল বন্ধ, শুক্রবার। মনে পড়ার সাথে সাথে আমি প্রশান্তি পেলাম,যাক বাবা,যেতে হবে না,আমি আবার শুয়ে পড়লাম,আপন মনে বেশ কিছুক্ষণ হাসলাম,আমি কত বোকা, জানিনা আজ কি বার,মাথায় বিভিন্ন চিন্তা উকি দিচ্ছে,। দিদি তো মনে হয় ঘুমে বিভোর হয়ে আছে,আমি কি করব, ডাক দিলে এক চড় দেবে, তাকে ভয় পেতাম,রোজ যখন ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরত ঘুমের ভান করতাম,কারণ আমি জানি না,তবে দিদি আমাকে এত অপছন্দ করত না, কাল আমার ষোড়শ জন্মদিন,আর দিদির,অষ্টাদশতম,
বছর দুয়েক পর আমিও ইউনিভার্সিটিতে পা রাখব,আজ আমি খুশি খুব খুশি, কি করার বাবা মা নেই, বয়স ১৬ বছর, এই এক দিদির সাথে কাটাচ্ছি ৪ টি বছর একলা, প্রথম দু বছর ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়িয়েছি,ফুটপাতে রাত কাটিয়েছি, বৃষ্টি হলে গ্যারেজে,ছোট ভাংগা গাছের নিচে রাত কাটাতাম,সাদা টি শার্ট আর হলুদ রঙের একটি ছোট্ট হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতাম,কারণ বাবা মায়ের মরার পর,আমাদের পয়সার অভাব ছিল না কোটি কোটি টাকা ছিল,যে পরিমাণ টাকা দিয়ে ৫-১০ বছর আরামে চলা যেত,সব চুরি হয়ে গেল,সব নিয়ে গেল,একটা কানা কড়িও রেখে যায় নি,দিদির তখন ক্যান্সার ছিল,ক্যান্সারের ওষুধ খেয়ে মাথার সব চুল ঝড়ে গিয়েছিল,লজ্জায় বের হত না,তার উপর আবার তার সাথে অসভ্য আচরণ করেছিল সেই অমানুষগুলো, লোকলজ্জার ভয়ে দিদি বাইরে যেত না,একদিন মাথায় ঘোমটা দিয়ে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল,লোকে তাকে ব্যাশ্যা বলছিল,আমরা পুলিশ স্টেশনে এসে রিপোর্ট করি,তখন বিএনপির সময়, যারা চুরি করেছে তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের খুব পরিচিত,২ বছর পর তাদের ক্ষমতা শেষ হলে আমরা ন্যায়বিচার পাই,তাদের ফাসি হয়,কিন্তু এই দুবছর যখন শীত আসত তখন আমার হাল বেহাল হয়ে যেত,দিদি কাপত ঠান্ডায়। আজও তা মনে পড়লে শরীর কাটা দেয়,এক হিমশীতল আতংকে কেপে উঠি আমি,তবে আজ শীত আনন্দের,উৎসবের, আজ শীত মানে গুড়ের পায়েস,খেজুরের রস,আর বাইরের কুয়াশা, আজ শীতে আমি কাথা গায়ে শুয়ে থাকি,আর ভাবি বাইরের মানুষের কথা,তাদের কষ্টের কথা,দিদি বলে আমি নাকি এখনো কচি,আমি নাকি নিস্পাপ, আমি শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছি,তখনই অপু,ও অপু,কই মরে গেলি নেকি,হ্যা বল দিদি,আজ তোর না কোন প্রতিযোগিতা ছিল,মনে পড়ল আজ বিজয় দিবস না!! উপস!!,আমি তো প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলাম, দিদি বলল,হ্যা,গেলি তো ভুলে,আচ্ছা দিদি আমার ডাকনাম অপুর্ব , তুমি অপু বলে বডাক কেন? দিদি বললেন,,আমাদের বড়দাদার বড়দাদা পথের পাচালি উপন্যাস টিকে খুব ভালবেসেছিলেন,তিনি বলে গিয়েছিলেন,বংশের পরের পুরুষ ছেলেদের নাম যেন অপু রাখা হয়,আর মেয়েদের দুর্গা, আমার কি নাম,দূর্গেশনন্দীনি না,আর আমাকে ডাকে দুর্গা বলে,তোর পুরো নাম অপুর্বচন্দ্র মহাশশি,
আর আমরা ডাকি অপু,বড়দাদার বড়দাদার নাম ছিল শুশ্চন্দ্র মোহন ভগবান,ব্রাক্ষন ছিলেন,লোকে বলে দেবি দুর্গার সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল,দেবির দেখা পেতে তিনি শীত,ক্ষুধা,মান,লজ্জা এরকম আরও ৪ টি ক্ষেত্র ত্যাগ করেছিলেন,১১ বছর বয়স থেকে,৫৩ বছর অবদি এমন চলেছিল,পরে অসুস্থ হয়ে মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই পাড়ি জমালেন না,আমি শুনলাম,এত কিছু জানতামই না, দিদি বলল,আজ ঠিক এই দিনে তিনি মারা যান,ঠিক একই সময়ে,।আমাদের পরিবারটা বনেদি,বাবা ব্রাক্ষন,মা সন্যাসিনী,মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান, মা বলতেন,মাত্র ১২ বছর বয়সে তার সেইযে চুল কাটা হয়েছিল, তারপর বারো বছর তিনি একমনে ধ্যান করতেন,১২ বছর থেকে তার মাথায় আর চুল হয় নি,বেড়োতে হলে ঘোমটা দিয়ে বেড়োতেন,মা যখন ধ্যান করতেন আমি মাঝে মাঝে উঁকি মেরে দেখতাম, তুইও মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি মারতিস,,মা মুচকি মুচকি হাসতেন,আজ তিনি নেই, বাবা বলেছেন,এই বংশের সবচেয়ে বেশি বয়সে মারা যাওয়ার ইতিহাস আমাদের দাদার, যিনি ৫৭ বছর বয়সে মারা যান,এর বেশি কখনো আমাদের বংশের কারো বয়স হয় নি,আর মেয়েদের ২৯ বছর ৩৬৪ দিন ২৪ ঘন্টা,৫৯ মিনিট, ৫৮ সেকেন্ড , কোন মেয়েই তিরিশের বেশি বাচে নি এই বংশে, মা বলত ,১৩ বছর বয়সে কিছু বাজে লোক মাকে ধর্ষন করেছিল,তাতে আমাদের জন্ম,তবে দেবীর জন্য আমরা সাভাবিক জন্মেছিলাম,কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় নি আমাদের মধ্যে । মা রাগ করে বলতেন,আমার বন্ধু বান্ধবীরা খেপাত,একবার ২২ বছর বয়সে তার ন্যাড়া শুষ্ক মাথায় চুমু খেয়েছিল এক রক্তপিপাসু যুবক,আর বারো বছর বয়সে তিনি এমনই ন্যাড়া হননি,এক বান্ধবী নিজে চুরি করে ফাসিয়ে দেয় তাকে,তার সব চুল ঝড়ঝড় করে কেটে ফেলে দেয়, তার অবশ্য করুন পরিনতি হয়,ক্যান্সারে মারা যায় সে, একদম মায়ের মত হাল ছিল তার । দিদিকে নিয়ে আরও বলতে চাই,দিদির হাসিটা আমার খুব মধুর লাগত,দিদি একটু বেশি আবেগী ছিলেন,ছাত্রী ছিলেন খুব ভালো, ক্লাস ৫, ৬,৭ এ তিনি টপ করেছেন,ক্লাস এইটে এসে তিনি থার্ড হন,দিদি তা সহ্য করতে পারেননি,রাতদিন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন,দিদি একবার ক্লাস সেভেনে থাকতে একবার জাতীয় ভাবে সেরা ডান্সারের এওয়ার্ড পেয়েছিলেন,পরের বছর তার আশা ছিল,ফার্স্ট হওয়ার,তবে এক ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলের কাছে তিনি হেরে যান,এতে দিদি রেগে তার নাচের সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন,তখন থেকে দিদি নাচ বাদ দেন, যদিও গান গাওয়া শুরু করেছিলেন, চালিয়ে যেতে পারেন নি,
কথাগুলো বলে অপুর্ববাবু থেমে গেলেন,নিজের জীবনের কিছু ঘটনা বলতে গিয়ে এসব বলছিলেন তিনি,তিনি মস্ত বড়ো কবি, ৫৮ বছর বয়স,ইন্টারভিউয়ের শেষে তার বুকের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যাথা হয়,সেখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি,আর পরের দিন দিনের বেলা মারা যান,তার এক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে তিলকী,আর ছোট ছেলে অপু যে ক্লাস ৯ এ পড়ত রেখে মারা যান তিনি,আর তার মারা যাওয়ার পর,তার স্ত্রী অনন্যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলে যান মাত্র ৩০ বছর বয়সে, তারপর তার ছেলে মেয়ে কে অপহরণ করে নিয়ে যায়,বছর দুয়েক পর,রাস্তায় তার ছেলের নগ্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়, আর তারই পাশে তার মেয়ে,যার মাথায় কোন চুল ছিল না,দেখলেই বোঝা যায়,তাদের সাথে কি রকম বাজে ব্যাবহার করা হয়েছে,অপু বংশের একমাত্র বালক যে নি সন্তান অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেছে,।আর মজার বিষয়, তাদের বংশের প্রত্যেকের মারা যাওয়ার সময় ছিল শীতকাল, ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ,ঠিক নটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।আর শুভর মারা যাওয়ার সময় ১৬/১২/২১,ঠিক ন'টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। তার মারা যাওয়ার সাথে সাথেই এই বংশের দরজা চিরজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।তিলকি তার৷ মৃত্যুপদযাত্রী ভাইয়ের পাশে নিস্তব্ধ হয়ে বসে ছিল,সে এমনেতেই তার ইজ্জত হারিয়েছে,সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,তার ভাই ডাক দিল, তিলকি দিদি,তিলকী দিদি,হ্যা বল,তুই আমায় বাচা,আমি মরতে চাই নে,ভাইয়ের কথায় তিলকির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। এমন কথা কোন মেয়ে সহ্য করতে পারে??? তার ভাইয়ের তখন মাত্র ১৬ বছর ছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী বেশ চমৎকার মননশীল

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শীতের সকাল নিয়ে বহু জিনিস লেখা যায়,যেমন এই কালের বিপদ,শীতের সকালের আত্না ইত্যাদি, কিন্তু আমি কিছুটা ভিন্নভাবে ভাবার চেস্টা করেছি,আর এই গল্পের মুল বিষয় হল,একটা পরিবার সেই পরিবারটার একটা সাধারণ কথা হলো,যে বংশের সবাই শীতের সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মারা যায়,এটা গল্পে বিভিন্ন কথার সাহায্যে উঠে এসেছে,আর হ্যা গল্পটাকে অনেকে অশ্লীল মনে করবেন,এবং তা করার কথা,আমি মাথা পেতে নিচ্ছি,কিন্তু,বিবেচনা করবেন আশা করি,এই

১৬ আগষ্ট - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪